মেকআপ করার মূল উদ্দেশ্য

মেকআপ করার মূল উদ্দেশ্য কি শুধুমাত্র নিজেকে ফর্সা হিসেবে উপস্থাপন করা?

​​​​​আমরা সবাই চাই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে। তাইতো মেকআপের মাধ্যমে নিজের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার চেষ্টার কমতি নেই! কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের মধ্যে মেকআপ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েই গেছে। এখনও মেকআপের মাধ্যমে চেহারার রঙ পুরোপুরিভাবে পাল্টে ফেলার প্রবণতা আছে অনেকেরই। কারও গায়ের রঙ যদি শ্যামবর্ণের হয়, তাহলে তো কথাই নেই! তাকে রাতারাতি সাদা বানিয়ে দিতে পারলেই যেন মেকআপের কাজ শেষ।

তাহলে, মেকআপ করার মূল উদ্দেশ্য কি শুধুমাত্র নিজেকে ফর্সা ত্বকের অধিকারী হিসেবে অন্যের সামনে উপস্থাপন করা? মোটেই না! গায়ের রঙ যেমনই হোক, সেটা তো কারোর যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না! নিজের স্কিনটোনকে ভালবাসুন, সবার আগে নিজেকে ভালবাসুন। আচ্ছা, সেটা তো বুঝলাম, কিন্তু মেকআপ করবো কেন তাহলে? আপনার এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে আজকের আর্টিকেলে।

মেকআপ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা

আমাদের দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এখনও শ্যামবর্ণের মেয়েদের অবজ্ঞা করা হয়। যদিও আগের তুলনায় এই ধরনের বৈষম্য বেশ কমে এসেছে। তবুও গায়ের রঙ একটু চাপা হলেই শুনতে হয়, “এই মেয়েকে বিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে যাবে, গায়ের রঙ একদম ময়লা!”

হ্যাঁ, ঠিক শুনেছেন! আশেপাশের মানুষ, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব প্রায় সবার মুখে এই ধরনের কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই যারা শ্যামবর্ণের অধিকারী তারা গায়ের রঙ নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে। কথাগুলো খুবই কষ্টদায়ক, যে বা যারা এই কথাগুলো শুনে থাকেন, শুধুমাত্র সে বা তারাই বুঝবে!

তাইতো তারা যখন সাজগোজ করে, তখন নিজে সাজলে কিংবা কেউ সাজিয়ে দিলে ত্বকের রঙ কয়েক শেইড ফর্সা যাতে দেখায় সেভাবে সাজাতে অনুরোধ করে। ফলে ফাউন্ডেশন ও পাউডারের ভুল শেইড ব্যবহার করতে হয়! ত্বকের স্বাভাবিক রঙ ঢাকা পড়ে যায় মেকআপের আস্তরণে। এটা কতটুকু জাস্টিফাইড? নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন তো।

সমাজের কিছু মানুষের কটুক্তি এড়িয়ে যেতে মেকআপ দিয়ে সাদা হতে চান? নিজের প্রতি ইনজাস্টিস করা হয়ে গেলো না? গায়ের রঙ কখনই সৌন্দর্যের মাপকাঠি হতে পারে না। ফর্সা মানেই সুন্দর, এই ধারণা বদলানোর সময় এসেছে!

তাহলে মেকআপ করার মূল উদ্দেশ্য কী?

আপনার মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে যে, “মেকআপ করলে দেখতে যদি সাদা না-ই দেখায় তাহলে মেকআপ কেন করবো? প্রয়োজন আছে কি?” অবশ্যই মেকআপ করবেন! মেকআপের মাধ্যমে আপনার ফেইসের ছোট খাটো খুঁতগুলো হাইড হয়ে যায় আর আপনার ন্যাচারাল বিউটিকে এনহ্যান্স করা যায়।

১) কনফিডেন্স লেভেল বুস্ট করে

আপনি যদি আপনার স্কিনটোন ঠিক রেখে মানানসই মেকআপ করেন খেয়াল করবেন যে আপনার কনফিডেন্স লেভেল কয়েকগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ আপনি যদি সুন্দরভাবে নিজেকে সাজিয়ে রাখেন, তবে দেখতে তো সুন্দর লাগবেই, পাশাপাশি এটা আপনার স্ট্রেস রিলিফ করতেও হেল্প করবে। অফিসে বা আউটিংয়ে হালকা সাজে দেখতে বেশ স্নিগ্ধ লাগে। আবার অকেশন অনুযায়ী হেভি মেকআপে আপনার গ্ল্যামারাস লুকটি ফুটে ওঠে। বেইজ লাইট হোক অথবা হেভি, স্কিনটোনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মেকআপে কিন্তু আপনাকে সবসময়ই সুন্দর লাগবে!

২) ইয়াংগার লুক দেয়

মেকআপ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ত্বকে থাকা দাগ ছোপ, বলিরেখা ইত্যাদি হাইড করে ফেলতে পারবেন। কালার কারেক্টর এবং কনসিলার এক্ষেত্রে বেশ কাজে দেয়। এছাড়াও হাইলাইটার ফেইসের হাইলাইট পয়েন্টগুলো, যেমন নোজ বোন, চিক বোন, ঠোঁটের উপরের অংশ ইত্যাদি বেশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। সুন্দরভাবে বেইজ মেকআপ সেট হলে স্কিন ফ্ললেস দেখায়।

৩) আপনার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে এনহ্যান্স করে

স্কিনটোন অনুযায়ী মানানসই ফাউন্ডেশন শেইড ও পাউডার ব্যবহার করলে, গালে হালকা করে ব্লাশ দিলে আর শেষে একটু হাইলাইটারের ছোঁয়া, এতেই আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে। হোয়াইটেনিং আর ব্রাইটেনিং এই দুইটি শব্দের মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে। সাদা ধবধবে হতে আপনার ত্বকের চেয়ে কয়েক শেইড লাইট ফাউন্ডেশন অ্যাপ্লাই করলে সেটা কখনোই স্কিনে ভালোভাবে বসবে না, বরং ওভারঅল লুকটাই বেমানান আর বিদঘুটে দেখাবে!

৪) মনকে প্রফুল্ল রাখে

মেকআপ করা তো অনেকের কাছে শখের জায়গা। নিজেকে একটু পরিপাটি করে রাখতে তো আমরা সবাই চাই, তাই না? আপনি নিজেকে প্রতিবার ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজিয়ে তুলতে পারেন বিভিন্ন মেকওভারের মাধ্যমে। নিজেকে সাজাতে নানান রকম আই মেকআপ লুক ট্রাই করতে পারেন, ভিন্ন ভিন্ন শেইডের লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করে নিজের লুকে চেঞ্জ আনতে পারেন, ডিফারেন্ট মেকআপ লুক ক্রিয়েট করতে পারেন আর এগুলোর মাধ্যমে আপনার মন প্রফুল্ল থাকবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা আছে, যেখানে তিনি লিখেছেন,

“কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।

মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ‐চোখ।

ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের পরে লোটে।

কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐চোখ।”

আপনার স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ধরে রাখুন এবং আত্মবিশ্বাসী হোন। মেকআপ করার মূল উদ্দেশ্য নিজেকে ফর্সা হিসেবে উপস্থাপন করা নয়, নিশ্চয় এখন সেটা বুঝতে পেরেছেন।

তাই স্কিনটোনের সাথে মানানসই মেকআপ প্রোডাক্টস ব্যবহার করুন। স্কিনটোন অনুযায়ী সঠিক ফাউন্ডেশন শেইড নির্বাচন করুন আর মনের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে নিন।

 

Related Posts